ঐতিহ্যশালীভবনের মালিকদের জন্য নির্দেশিকা |
...
| ২
| ৩
| ৪
|
|
ভূমিকা :
|
কলকাতার পুরোনো বাড়িগুলির মধ্যে যেগুলির স্থাপত্য-বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহ্যগত মূল্য রয়েছে, সেগুলির সংরক্ষণের জন্য কলকাতা পৌরসংস্থা আগ্রহী। বিশেষত কলকাতা শহরের ইতিহাসের ক্ষেত্রে এই বাড়িগুলির অবদান গুরুত্বপূর্ণ বলে এগুলির প্রকৃত রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন। তাই কলকাতার ‘ঐতিহ্যশালী ভবন’ হিসাবে চিহ্নিত বাড়িগুলির একটি বিষয়ানুগ তালিকা তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। নথিপত্র সংগ্রহ ও বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ সরকার গঠিত বিশেষজ্ঞদলের সহায়তা নিয়ে এই তালিকা প্রস্তুতির কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে এবং সেটি নিয়মিত পরিবর্ধন-পরিমার্জন করা হয়। ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটির প্রস্তাব মত এবং কলকাতা পৌরসংস্থা অনুমোদিত গ্রেড I, গ্রেড IIA এবং গ্রেড IIB তালিকাভুক্ত ঐতিহ্যশালী ভবনের একটি গ্রেডেড তালিকা প্রকাশিত হয়েছে যা এই ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে।
|
|
ক) ঐতিহ্যশালী ভবন কী?
|
"ঐতিহ্যশালী ভবন" বুঝাতে এক বা একাধিক ভূখণ্ডে বা কোন ভূখণ্ডের অংশে অবস্থিত কোন ভবন যাকে ঐতিহাসিক, স্থাপত্যগত, পরিবেশগত বা কৃষ্টিজনিত উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ আবশ্যক এবং সেই ভবন সংলগ্ন বা অংশবিশেষ স্থানের বেড়া ঘেরা বা সংরক্ষণের জন্য যে ব্যবস্থা গ্রহণ সমীচীন হেতু এবং ১৯৭৯ সালের পশ্চিমবঙ্গ শহর এবং গ্রামীণ (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) আইনের ৩১ নং ধারার (৪) নং উপধারার (ক) দফার (আ) উপদফা অনুযায়ী সংরক্ষণের জন্য স্থান ও ভবনকেও ধরা হবে।
|
|
খ) ঐতিহ্যশালী অঞ্চল বা পরিপার্শ্ব বলতে কী বোঝায়?
|
এর সংজ্ঞা এইভাবে দেওয়া যায় যে, কোনো স্থান বা গৃহ বা গৃহগুচ্ছের খণ্ডাংশ বা সমগ্র অংশের দ্বারা গঠিত যে পারিপার্শ্বিকতা বা পরিবেশ - সুনির্দিষ্ট বাহ্যিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য বহন করে এবং ঐতিহ্যশালী ভবন বা স্থানটির সাথে সংশ্লিষ্ট গুণগত ও পরিমাণগত বৈশিষ্ট্যাবলি যেগুলি তার স্থান ও দর্শন মাহাত্ম্যকে জাগরুক করতে পারে এরূপ যে বৈশিষ্ট্যাবলিকে সুরক্ষিত ও সংরক্ষিত করা প্রয়োজন।
|
|
গ) ঐতিহ্যশালী ভবনের সংরক্ষণ বলতে কি বোঝায়?
|
কোনো ভবন, তার পরিপার্শ্ব অথবা শিল্প-সুষমামণ্ডিত অংশবিশেষকে সেটির ঐতিহাসিক, স্থাপত্যগত, পরিবেশগত বা সাংস্কৃতিক গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্যকে বজায় রেখে সংস্কার কাজের পদ্ধতিকে সংরক্ষণ বলা যেতে পারে। এর দ্বারা বোঝায় প্রয়োজনানুগ রক্ষণাবেক্ষণ, যার মধ্যে পড়ে পুরাতনকে অক্ষুন্ন রেখে পুনর্গঠন ও পুনরুদ্ধার।
|
|
ঘ) ঐতিহ্যশালী ভবনের অবস্থা অক্ষুন্ন রাখা বলতে কী বোঝায়?
|
ঐতিহ্যশালী ভবনের অবস্থা অক্ষুন্ন রাখা বলতে বোঝায় এর বর্তমান বাহ্যিক কাঠামো, পারিপার্শ্বিকতা বা শিল্পকর্মের বর্তমান অবস্থা বজায় রাখা এবং পুনরায় ক্ষয় রোধ করার জন্য মেরামতি ও রক্ষণাবেক্ষণ করা।
|
|
ঙ) ঐতিহ্যশালী ভবনের অবস্থা পুনরুদ্ধার করা বলতে কী বোঝায়?
|
ঐতিহ্যশালী ভবনের অবস্থা পুনরুদ্ধার করা বলতে বোঝায় এর পূর্বতন পরিচিত গঠন (আইন ও বিধি নিয়ম বহির্ভূতভাবে ভেঙে ফেলা, অংশবিশেষ বা শিল্পকর্ম সারিয়ে ফেলা, নতুন নির্মাণ সংযোজিত করার পূর্বে যে রূপে বিরাজমান ছিল) ফিরিয়ে আনার জন্য সংযোজিত অংশ সরিয়ে/ভেঙে ফেলা, পূর্বতন ঐতিহ্যময় রূপের সাথে মানানসই স্থাপত্যের পূনরূদ্ধার বা সংবেদনশীলভাবে সমবৈশিষ্ট্যের স্থাপত্য সৃষ্টি করা।
|
|
উপরে
|
|
চ) ঐতিহ্যশালী ভবনের স্বত্বাধিকারীর (মালিকের) দায়িত্ব কী?
|
কলকাতা পৌরসংস্থা কর্তৃক ঘোষিত ঐতিহ্যশালী ভবনের স্বত্বাধিকারী বা দখলদার, ঐতিহ্যশালী ভবনটির সংরক্ষণের ব্যাপারে দায়িত্বশীল থাকবেন। সংশ্লিষ্ট আইন বা বিধিনিয়ম ভঙ্গ করে কোনোরকম মেরামতি সংরক্ষণ বা সংস্কার করতে পারবেন না। ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে, সামগ্রিক ভবনের সাথে বেমানান অংশ সরিয়ে ফেলতে হবে।
|
|
সাধারণ নির্দেশিকা :
|
|
ক) ঐতিহ্যভবনের বিক্রয় বা লীজ প্রদান -
|
যে বাড়িগুলি ঐতিহ্যশালী ভবন হিসাবে এখনও পর্যন্ত ঘোষিত হয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে কোন পূর্ব অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। এ ব্যাপারে মালিক বাড়ি হস্তান্তরের সময় বাড়িটির ঐতিহ্য সংক্রান্ত বিষয়টি রেজিস্টার্ড নথির মাধ্যমে সম্ভাব্য ক্রেতাকে জানাবেন। এ ব্যাপারে ঘোষিত বাড়ির পুস্তিকাটি দেখুন। কিন্তু যে বাড়িগুলি ঐতিহ্যশালী ভবন হিসাবে চিহ্নিতকরণের জন্য বিবেচনাধীন, সেগুলির ক্ষেত্রে মালিক ও সম্ভাব্য ক্রেতাকে যৌথভাবে কলকাতা পৌরসংস্থার নিকট অনুমতির জন্য আবেদন করতে হবে।
|
|
খ) ঐতিহ্যশালী সম্পত্তির মধ্যে নতুন নির্মাণ কাজ এবং/অথবা নতুন সংযোজন/পরিবর্তন করা -
|
কোন ঐতিহ্যশালী ভবনের উন্নয়ন/পরিবর্তন/পরিমার্জন/নতুন নির্মাণের সাধারন শর্তাবলি -
|
১) গ্রেড টেবিল :
ঐতিহ্যশালী ভবনের গ্রেড |
ঐতিহ্যশালী ভবনে পরিবর্তনের অনুমোদন সীমা |
I |
বহিরঙ্গের কোন পরিবর্তন অনুমোদনযোগ্য নয়। ভবনটির ব্যবহারের প্রকৃতি ভবনটির চরিত্রের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। |
II A |
গ্রেড I এর অনুরূপ। অতিরিক্ত নির্মাণযোগ্য ফাঁকা জমি থাকলে, নতুন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে, যদি তা বর্তমান ঐতিহ্যশালী ভবনের চরিত্রের সাথে মানানসই হয় এবং বর্তমান ভবনের দৃশ্যমানতাকে কোনরূপ বাধাপ্রাপ্ত না করে। |
II B |
বর্তমান ভবনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতার পরিবর্ধনের প্রস্তাব অনুমোদন করা যেতে পারে। |
III |
ঐতিহ্যশালী ভবনটির ইতিহাস সম্বলিত নির্দেশিকা ফলক লাগাতে হবে। যেসব ভবনগুলির স্থাপত্যগত বৈশিষ্ট্য নগন্য, সেগুলিকে ভাড়ার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। |
বিশেষ দ্রষ্টব্য :- যে কোন প্রস্তাবের সামঞ্জস্যতার বিষয়ে ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। |
|
২) নব-নির্মাণের জন্য অতিরিক্ত জমি থাকতে হবে।
|
৩) ঐতিহ্যশালী ভবনের বর্তমান রূপের সাথে নবনির্মাণ/সংযোজন/পরিবর্তনকে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
|
৪) এই নির্মাণের নকশা এবং পরিকল্পনা করবেন নথিভুক্ত সংরক্ষণ স্থপতি (অ্যানেক্স-এ দ্রষ্টব্য)
|
৫) কলকাতা পৌরসংস্থায় চালু গৃহনির্মাণ বিধি অনুসারে সংযোজন/পরিবর্তন প্রস্তাব রচিত হতে হবে।
|
|
গ) ঐতিহ্যশালী ভবন ভেঙে ফেলা -
|
সাধারণত কোনো ঐতিহ্যশালী ভবনকেই ভেঙে ফেলার অনুমতি দেওয়া হয় না। যদিও ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটির পূর্ব অনুমতির ভিত্তিতেই এবং সংরক্ষণ স্থপতির সুপারিশক্রমে ঐতিহ্যশালী ভবনের তাৎপর্যহীন অংশ ভাঙার অনুমতি পাওয়া যেতে পারে।
|
|
ঘ) মেরামতির অনুমতি -
|
কোনো ঐতিহ্যশালী ভবন মেরামতির জন্য নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটির অনুমতি প্রয়োজন।
১) গৃহের সম্মুখভাগ, কাঠামো এবং অভ্যন্তরের রূপ এবং অবস্থা ফিরিয়ে আনা।
২) স্থাপত্যগত বৈশিষ্ট্য/অংশ ফিরিয়ে আনা।
৩) ভেঙে পড়া অংশের পুনর্নির্মাণ।
৪) জটিল/সঙ্কটজনক অবস্থার জন্য বর্তমান রূপের সঙ্গে মানানসই ভাবে মেরামতি অসম্ভব এই কারণে পুনর্নির্মাণ।
|
|
...
| ২
| ৩
| ৪
|
|
|