Official Website of Kolkata Municipal Corporation
   
۩   প্রথম পাতা
সম্পত্তির মূল্যনির্ধারণ
 
বার্ষিক মূল্যমান নির্ণয় (অ্যানুয়াল ভ্যালুয়েশন) :

ক) যদি মালিক নিজে সম্পত্তি ভোগ করেন, তবে বিভাগীয় তথ্যাদি সাপেক্ষে যুক্তিসঙ্গত ভাড়া নির্ধারণ পদ্ধতি (রিজনেবল রেন্ট মেথড) প্রয়োগ করে বার্ষিক মূল্যমান নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ একই অঞ্চলে অনুরূপ অন্যান্য সম্পত্তি ভোগের জন্য কত টাকা ভাড়া স্থির করা হয়েছে বা চালু রয়েছে তার ওপর নির্ভর করে এই যুক্তিসঙ্গত ভাড়া নির্ধারণ পদ্ধতি আরোপিত হয়। মাসিক এই ভাড়াকে বারো দিয়ে গুণ করে বার্ষিক ভাড়া নির্ধারিত হয়। সেই বার্ষিক ভাড়ার দশ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয় সেই সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় বাবদ। অবশিষ্টাংশ সেই সম্পত্তির বার্ষিক মূল্যমান হিসেবে স্থির হয়।

খ) যদি ওই সম্পত্তিতে ভাড়া দেওয়া থাকে তবে সেই মাসিক ভাড়াকে (সার্ভিস চার্জ সমেত) বারো দিয়ে গুণ করে যথারীতি তার দশ শতাংশ বাদ দিয়ে স্থির হয় সেই সম্পত্তির বার্ষিক মূল্যমান।

গ) থিয়েটার বা সিনেমা হলের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত আদায়ের থেকে কর বাদ দিয়ে মোট বার্ষিক আদায়ের ৭.৫ শতাংশ স্থির হয় সেই থিয়েটার বা সিনেমা হলের বার্ষিক মূল্যমান।

ঘ) নির্মাণহীন শূন্য জমির ক্ষেত্রে, ৩ আগস্ট ২০০৮ - ২০০৯ থেকে ৫ কাঠা পর্যন্ত জমির বার্ষিক মূল্যমান হল, ওই অঞ্চলে প্রচলিত বাজার দরের ২.৫% ও ৫ কাঠার বেশি জমি হলে প্রচলিত বাজার দরের ৭%। ২০০৮-০৯ সালের পূর্বে আয়তন নির্বিশেষে সকল জমির ক্ষেত্রে, বার্ষিক মূল্যমান হবে ওই অঞ্চলে প্রচলিত বাজার দরের ৭%।


সম্পত্তি করের হার (রেট অফ ট্যাক্সেস) :

ক) যদি বার্ষিক মূল্যমান ৩০০ টাকার বেশি কিন্তু ৬০০ টাকার কম হয়, তখন বার্ষিক কর হবে বার্ষিক মূল্যমানের ১১%। ধরা যাক, বার্ষিক মূল্যমান ৫০০ টাকা। সেক্ষেত্রে বার্ষিক কর-৫০০ টাকার ১১% অর্থাৎ ৫৫ টাকা এবং ৫০০ টাকার ০.৫% (হাওড়া ব্রিজ কর) এর যোগফল। এই বার্ষিক করের এক চতুর্থাংশের নিকটস্থ সংখ্যার টাকায় নির্ধারিত হয় ত্রৈমাসিক কর। নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে জমা দিলে ত্রৈমাসিক করের ওপর ৫% ছাড় দেওয়া হয়।

খ) যদি বার্ষিক মূল্যমান ৬০০ টাকার বেশি কিন্তু ১৮,০০০ টাকার কম হয়, তখন বার্ষিক মূল্যমানকে ৬০০ দিয়ে ভাগ করে ভাগফলের সঙ্গে ১০ যোগ করার পর যে সংখ্যাটি পাওয়া যায় তার নিকটস্থ সংখ্যার সমপরিমাণ শতাংশ (বার্ষিক মূল্যমানের ওপর) এবং ০.৫% (হাওড়া ব্রিজ কর) এর যোগফল হল বার্ষিক কর। ধরা যাক, বার্ষিক কর ১৩০০ টাকার (১৩০০/৬০০+১০ = ২.১৬+১০= ১২.১৬ নিকটস্থ সংখ্যায়) ১২.২ শতাংশ। অর্থাৎ ১৫৮.৬০ টাকা। এর সঙ্গে যোগ হবে ১৩০০ টাকার ০.৫% হাওড়া ব্রিজ কর। এই বার্ষিক করের এক চতুর্থাংশের নিকটস্থ সংখ্যার টাকায় নির্ধারিত হয় ত্রৈমাসিক কর। নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে জমা দিলে ত্রৈমাসিক করের ওপর ৫% ছাড় দেওয়া হয়।

গ) যদি বার্ষিক মূল্যমান ১৮০০০ টাকার বেশি হয়, তখন বার্ষিক কর হবে, ১৮০০০ টাকার ৪০ শতাংশ। ধরা যাক, বার্ষিক মূল্যমান ২০০০০ টাকা। সেক্ষেত্রে বার্ষিক কর ২০০০০ টাকার ৪০% ও ২০০০০ টাকার ০.৫% হাওড়া ব্রিজ করের যোগফলের নিকটস্থ সংখ্যার টাকায় নির্ধারিত হয় বার্ষিক কর। বার্ষিক করের এক চতুর্থাংশের নিকটস্থ সংখ্যার টাকায় নির্ধারিত হয় ত্রৈমাসিক কর। নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে জমা দিলে ত্রৈমাসিক করের ওপর ৫% ছাড় দেওয়া হয়।

ঘ) ফ্ল্যাট বা নির্দিষ্ট ইউনিটের ক্ষেত্রে ওই ঠিকানার সমস্ত ফ্ল্যাট বা ইউনিটগুলির পুঞ্জীভূত বার্ষিক মূল্যমানের ওপর নির্ধারিত হয় সামগ্রিক বার্ষিক কর। এই বার্ষিক কর প্রত্যেকটি ফ্ল্যাট বা ইউনিটের বার্ষিক মূল্যমানের সাপেক্ষে আনুপাতিক হারে বন্টিত ও প্রযোজ্য হয়।

ঙ) বস্তি বা অন্যান্য বিধিসম্মত সংগঠনগুলির ক্ষেত্রে করের হার ভিন্ন। বস্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বার্ষিক করের পরিমাণ হল যথাক্রমে বার্ষিক মূল্যমানের ১৮% ও ১৫%।

চ) আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে বাণিজ্যিক বা অনাবাসিক হিসেবে ব্যবহৃত সম্পত্তির ক্ষেত্রে বার্ষিক করের ওপর অনধিক ৫০% সারচার্জ অতিরিক্ত আরোপিত হয়।

ছ) অনধিক ৩০০ টাকা বার্ষিক মূল্যমান সম্বলিত সম্পত্তির ক্ষেত্রে কোনও কর প্রযোজ্য নয়।


বকেয়া সম্পত্তি করের বিষয়ে কীভাবে জানা যায় :

অনুগ্রহ করে কর নির্ধারণ ও সমাহরণ বিভাগের সংশ্লিষ্ট ইউনিটের কমপিউটার শাখা থেকে প্রথমে জ্ঞাপন-পত্র (লেটার অফ ইনটিমেশন) সংগ্রহ করুন। এবার এই জ্ঞাপন-পত্রটি সংশ্লিষ্ট ডিভিশন/ইউনিট থেকে পরখ করিয়ে নিন। যদি জ্ঞাপন-পত্রটি যথাযথ হয়, তাহলে সেটাই হবে আপনার সম্পত্তি করের সঠিক হিসাব।

পৌরকর নির্ধারণ ন্যায়পীঠ (মিউনিসিপ্যাল অ্যাসেসমেন্ট ট্রাইবুনাল) এর কার্যাবলি :
কলকাতা পৌরসংস্থা নির্ধারিত সম্পত্তির বার্ষিক মূল্যমান ও সম্পত্তি করের সঙ্গে কোনও ব্যক্তি একমত না হতেই পারেন। সেক্ষেত্রে পৌর আইন, ১৯৮০-র ১৮৬ ও ১৮৭ ধারা অনুসারে শুনানি আধিকারিকের কাছে আপত্তি জানাবার তাঁর যথেষ্ট সুযোগ বা স্বাধীনতা আছে। শুনানি আধিকারিক এই ধরনের আপত্তি (মৌখিক/লিখিত) বিবেচনা করে পৌর আইন, ১৯৮০-র ১৮৮ ধারা অনুযায়ী সেই সম্পত্তির বার্ষিক মূল্যমান নির্ধারণ করেন। তাঁর সিদ্ধান্তের পরেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আবেদন জানাতে পারেন পুনর্বিচারের জন্য। সেক্ষেত্রে পৌর আইন, ১৯৮০-র ১৮৯ ধারা অনুসারে তাঁকে পৌরকর নির্ধারণ ন্যায়পীঠে (মিউনিসিপ্যাল অ্যাসেসমেন্ট ট্রাইবুন্যাল) আবেদন জানাতে হবে। এই ন্যায়পীঠ একজন চেয়ারম্যান ও অনধিক পাঁচজন সদস্য দ্বারা গঠিত। উল্লেখনীয় যে, বকেয়া সমস্ত কর জমা দেবার পর তবেই পৌরকর নির্ধারণ ন্যায়পীঠে এই আবেদন বিচারের যোগ্য হয়ে উঠবে। কারণ, ন্যায়পীঠে এই ধরনের আবেদনের ক্ষেত্রে ১৯৮৩-র সীমাবদ্ধতা আইন (প্রভিশন্‌স অফ লিমিটেশন অ্যাক্ট) প্রযোজ্য। ন্যায়পীঠে নির্ধারিত বার্ষিক মূল্যমানই চরম ও চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে এবং পরবর্তী কালে কোনও সদর আদালতে এই মূল্যমান পুনর্বিবেচনার কোনও সুযোগ থাকবে না।

সম্পত্তি কর আদায়ে প্রযোজ্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থার তথ্য :
অনাদায়ী সম্পত্তি করের ক্ষেত্রে পৌর আইন, ১৯৮০-র ২১৯-২৩১ বি, ২২৩, ২২৫ এবং ২৭৫ (এএ) ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়:
ক) ২২০-২২১ ধারা অনুযায়ী ক্রোক-পরোয়ানা (ডিসট্রেস ওয়ারেন্ট) জারি করে অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় করে দেওয়া হয়,
খ) স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় করে দেওয়া হয়, (২২১এ ধারা অনুসারে সম্পত্তি ক্রোকের মাধ্যমে বা, ২২১বি ধারা অনুযায়ী সংযুক্ত সম্পত্তি বিক্রয়ের মাধ্যমে),
গ) বঙ্গ আইন ৩, ১৯১৩ (Bengal Act, III 1913)-র ২২৩ ধারা অনুযায়ী কর আদায় করা হয়,
ঘ) ২২৫ ধারা অনুযায়ী ভাড়াটিয়াদের মাসিক ভাড়া থেকে বকেয়া কর আদায় করা হয়,
ঙ) ২৭৫ [এএ] ধারা অনুযায়ী জল সরবরাহের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।